বায়োগ্যাস কী? বায়োগ্যাস কীভাবে এবং কেন তৈরি করা হয়?

 বায়োগ্যাস কী? বায়োগ্যাস কীভাবে এবং কেন তৈরি করা হয়? জেনে নিন বায়োগ্যাস তৈরির প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয়তা এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য:

প্রতি বছর বায়োমেথেনের মাধ্যমে ৬.৪ বিলিয়ন কিউবিক মিটার জ্বালানী উৎপাদিত হয়1। এটি জৈব পদার্থ থেকে তৈরি বায়োগ্যাস। এটি পরিবেশগতভাবে বান্ধব এবং অপচয় ও ফেলে দেওয়া জৈব পদার্থ থেকে তৈরি হয়1


বায়োগ্যাসের মূল উপাদান হল মিথেন (৫৫-৬৫%)1। এতে কার্বন-ডাই অক্সাইড (৩০-৪০%), নাইট্রোজেন, এবং কিছু হাইড্রোজেন সালফাইড থাকে।1 এটি জীবাণুদ্বারা পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে তৈরি হয়।

মূল বিষয়গুলি

  • বায়োগ্যাস একটি পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি গ্যাস যা জৈব পদার্থ থেকে তৈরি হয়
  • এর প্রধান উপাদান মিথেন, কার্বন-ডাই অক্সাইড, এবং নাইট্রোজেন
  • বায়োগ্যাস উৎপাদন কম খরচে এবং পুনরায় ব্যবহার করা যায়
  • বায়োগ্যাস উৎপাদন পরিবেশ বান্ধব এবং জ্বালানি উৎস হিসাবে দক্ষ
  • বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিবেশ সংরক্ষণ এবং কার্বন নিষ্কাশন কমানোতে সহায়ক

বায়োগ্যাস এর মৌলিক ধারণা

বায়োগ্যাস হল একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটি জৈব পচা মাধ্যমে তৈরি হয়। এতে মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং জল থাকে।2

এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং ধোঁয়াবিহীন। এটি বায়োদিগেস্টার থেকে আসে।

বায়োগ্যাসের বৈশিষ্ট্য

বায়োগ্যাস উচ্চ তাপশক্তি সহ একটি জ্বালানি। এটি পরিবেশবান্ধব এবং নবায়নযোগ্য।2

১ কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস থেকে ৫৫০০-৬৫০০ কিলোক্যালরি তাপশক্তি পাওয়া যায়। উৎপাদনের পর অবশিষ্ট আবর্জনা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।2

বায়োগ্যাস থেকে প্রাপ্ত তাপশক্তি

বায়োগ্যাস একটি জ্বালানি হিসাবে কাজ করে। এটি অন্যান্য জ্বালানির চেয়ে উচ্চ দক্ষতা সহ তাপশক্তি প্রদান করে।2

একই পরিমাণ বায়োগ্যাস থেকে প্রাপ্ত তাপশক্তি অন্যান্য জ্বালানির চেয়ে বেশি।2

গ্যাসের ধরণ  (g/L) আণবিক ভর
হেলিয়াম 1.99 4
আর্গন - -
নিয়ন 0.9 20
ক্রিপটন 3.749 84
জেনন 5.8872 129.9
রেডন 7 222

এই তালিকাটি বিভিন্ন প্রকারের গ্যাসের ঘনত্ব এবং আণবিক ভরের তথ্য দেয়।2 এই তথ্য বায়োগ্যাস সংক্রান্ত জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।2


উপরের ছবিতে বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য ছবিটি সহায়ক।3

"বায়োগ্যাস হল একটি পরিবেশ বান্ধব এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস। এর সর্বোচ্চ উপকারিতা হল এটি আমাদের পরিবেশ রক্ষা করতে সাহায্য করে।"

বায়োগ্যাসের এই গুণগুলির কারণে এটি একটি বিকল্প জ্বালানি হিসাবে বিবেচিত হয়।2 এটি জৈব পচা থেকে উৎপন্ন হওয়ায় আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।2

বায়োগ্যাস কী? বায়োগ্যাস কীভাবে এবং কেন তৈরি করা হয়?

বায়োগ্যাস হল একটি পরিশুদ্ধ জ্বালানি যা জৈব পদার্থের পচন থেকে তৈরি হয়।4 এটি এনারবিক ডাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন রান্না এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন।5

এটি জীবাশ্ম জ্বালানির একটি বিকল্প। এটি বনজ সম্পদ সংরক্ষণে সাহায্য করে। যেমন, কাঠ, খড়-কুটা, নাড়া এবং শুকনা গোবর।

বায়োগ্যাস তৈরি করার লক্ষ্য হল জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা করা। এটি পরিবেশ সুরক্ষা এবং জৈব সার উৎপাদনেও সাহায্য করে।4

বাংলাদেশে প্রতি বছর গ্রামীণ অঞ্চলে প্রায় 3 কোটি 90 লক্ষ মেট্রিক টন জাতীয় জ্বালানির প্রয়োজন হয়।5 1972 সালে প্রথম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মিত হয়। 2020 সালের জুনে মোট 76,771টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মিত হয়েছে।

বায়োগ্যাস শুধু খাবার রান্নার জন্য নয়, এটি বিদ্যুৎ উত্পাদন, গাড়ি ইন্ধন, জৈব সার উত্পাদন এবং তাপ উত্পাদনের জন্যও ব্যবহৃত হয়।5

সারাংশ হিসাবে, বায়োগ্যাস একটি পরিশুদ্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটি জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জৈব সার উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়।45

"বায়োগ্যাস হল একটি পরিশুদ্ধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি যা জৈব পদার্থের পচনের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। এটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে, যেমন রান্না, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন ইন্ধন, জৈব সার উৎপাদন এবং তাপ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।"
বায়োগ্যাস উৎপাদনের উপকরণ পরিমাণ
গোবর প্রায় 1:1 অনুপাত
মুরগির/মানব বর্জ্য প্রায় 1:1 অনুপাত

একটি স্থিতিশীল ডোম আকৃতির বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণে প্রায় 220 মিটার ব্যাসের এবং 250 মিটার গভীরতার একটি বৃত্তাকার গর্ত খনন করতে হয়।4 এই প্ল্যান্টের নির্মাণ ব্যয় প্রায় ৭-৮ সদস্যের একটি পরিবারের জন্য।4

সারাংশ হিসাবে, বায়োগ্যাস একটি পরিশুদ্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটি জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জৈব সার উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়।45

বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়া

  1. বায়োগ্যাস উৎপাদনে প্রায় 1:1 অনুপাতে গোবর, পাখির/মানবের বর্জ্য মিশ্রণ করতে হয়।4
  2. বায়োগ্যাস উৎপাদনের সময় পাথর, চুল এবং বড় টুকরা গোবর যেন বায়োডাইজেস্টারে না ঢোকে তা নিশ্চিত করতে হবে।4
  3. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের গ্যাস ভালভ থেকে বাইরে গ্যাস রিসোস্তে পারে যা পানিতে ডুবিয়ে চেক করে সংস্কার করা যাবে।
  4. বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে চুলা, বিদ্যুৎ জেনারেটর ইত্যাদিতে গ্যাস সরবরাহের পাইপ ব্যবস্থায় জল জমাবন্দী থেকে প্রতিরোধ করা প্রয়োজন।

সারাংশ করে, বায়োগ্যাস একটি পরিশুদ্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি। এটি জ্বালানি সঙ্কট মোকাবেলা, পরিবেশ সুরক্ষা এবং জৈব সার উত্পাদনে ব্যবহৃত হয়।45

বায়োগ্যাস উৎপাদনের মূলনীতি ও প্রক্রিয়া

জৈব পদার্থের অক্সিজনহীন পচনের মাধ্যমে বায়োগ্যাস তৈরি করা সম্ভব।6 খামার বর্জ্য এবং প্রাণিজ ফসল অবশেষ ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

এনারবিক ডাইজেশন প্রক্রিয়া

প্রথমে, বায়োমাসের উপাদানগুলো ভেঙে যায়। এই উপাদানগুলো প্রোটিন, চর্বি, এবং শর্করা হয়ে ওঠে। তারপর, এসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এগুলোকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত করে।

রাসায়নিক বিক্রিয়া

শেষে, মিথেন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এই উপাদানগুলোকে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত করে।7 এই বিক্রিয়াগুলি বায়োগ্যাস তৈরি করে। এটি একটি শক্তিশালী জৈব পদার্থ।

উৎপাদন ধাপসমূহ

বায়োগ্যাস তৈরির প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।6 বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়া দৃঢ়ভাবে পরিচালিত হয়। এটি দেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নতি ঘটিয়েছে।



বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রাথমিক ধাপসমূহ বিবরণ
এনারবিক ডাইজেশন বায়োমাসের বিভিন্ন উপাদান ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয়
এসিড উৎপাদন এসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া সরল উপাদানগুলোকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত করে
মিথেন উৎপাদন মিথেন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এই উপাদানগুলোকে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত করে

বায়োগ্যাস উৎপাদনের কাঁচামাল

বায়োগ্যাস তৈরি করতে বিভিন্ন কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। এতে পশুর গোবর, মানুষের মল, কৃষি অবশিষ্ট এবং রান্নাঘরের আবর্জনা অন্তর্ভুক্ত।8 শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ এবং কচুরিপানাও ব্যবহার করা যায়।

যেকোনো পচনশীল জৈব পদার্থ বায়োগ্যাস তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

পশুর বর্জ্য বায়োগ্যাস তৈরির জন্য বেশি ব্যবহৃত হয় কারণ এটি সহজলভ্য।9 বাংলাদেশে শস্য অবশেষ, গোবর এবং জ্বালানি কাঠ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।9

১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে প্রতিদিন ২৪,২০,০০,০০০ কিলোগ্রাম বর্জ্য থেকে বিশাল পরিমাণে জৈবগ্যাস উৎপাদিত হয়েছে।9 ২০২১ সালের মধ্যে বায়োমাস এবং বায়োগ্যাস থেকে ৩১.০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।5



বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং ব্যবহার অপরিসীম সম্ভাবনা বয়ে আনে।5 ২০২০ জুনে পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭৬,৭৭১টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মিত হয়েছে। এটি গ্রামীণ অঞ্চলে এই প্রযুক্তির গুরুত্ব প্রতিফলিত করে।5 বায়োগ্যাস পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কাঁচামাল উপকারিতা
পশুর গোবর বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য সহজলভ্য এবং সঠিক উৎস
কৃষি অবশিষ্ট জৈব আবর্জনা হিসাবে ব্যবহার উপযোগী এবং পদার্থ পরিশুদ্ধতায় সহায়ক
জৈব আবর্জনা বায়োগ্যাস উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় এবং পরিবেশ বান্ধব উপায়ে জ্বালানি উৎপাদন করে

উপরোক্ত তথ্যগুলি বায়োগ্যাস উৎপাদনের কাঁচামাল এবং এর ব্যবহারের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলি তুলে ধরে।895

বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের প্রকারভেদ

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট দুই ধরনের। একটি হল স্থির ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং অন্যটি ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। স্থির ডোম প্ল্যান্টের নির্মাণ খরচ কম।10

কিন্তু এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা জটিল। ভাসমান ডোম প্ল্যান্টের নির্মাণ খরচ বেশি। কিন্তু এটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।

স্থির ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট

স্থির ডোম প্ল্যান্টে গ্যাস সংগ্রহ ক্ষেত্র স্থির। এটি গ্রামীণ ও দারিদ্র্যমুক্ত এলাকায় ব্যবহৃত হয়।10

এই প্ল্যান্টের নির্মাণ খরচ কম। কিন্তু এটি রক্ষণাবেক্ষণ জটিল। এছাড়াও, শক্তি উৎপাদনক্ষমতা কম।

ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট

ভাসমান ডোম প্ল্যান্টে গ্যাস সংগ্রহ ক্ষেত্র ভাসমান। এটি নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়।11

কিন্তু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ। এই প্ল্যান্টগুলি বড় ফার্ম ও ছোট শিল্পে ব্যবহৃত হয়।11



বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের উভয় ধরণেরই সুবিধা ও অসুবিধা আছে।1011 পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদন এবং গ্রামীণ জ্বালানি সমাধানে উভয় প্ল্যান্টই গুরুত্বপূর্ণ।

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের পদ্ধতি

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি জাতীয় জ্বালানি তৈরির ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা পালন করে। প্রথমে, একটি উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে। এটি প্ল্যান্টের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।11

এরপর, ডাইজেস্টার নির্মাণ করতে হবে। এছাড়াও, ইনলেট ও আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে। গ্যাস সংগ্রহ ও সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। প্ল্যান্টের আকার নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পরিমাণ ও গ্যাসের চাহিদা নির্ধারণ করতে হবে।11

  1. বাংলাদেশে প্রতি বছরে ৯০ লাখ মেট্রিক টন জাতীয় জ্বালানি ব্যবহার হয়। এর ৬০/৭০ ভাগ গ্যাস হিসাবে তৈরি হয়।12
  2. ৭-৮ সদস্যবিশিষ্ট পরিবারের জন্য মাঝারি আকারের গরুর গোবর থেকে ১০৫ ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন সম্ভব।12
  3. প্লান্ট চালু করার সময় ১.৫/২ টন মাল প্রয়োজন।12
  4. ১.২৭/২.৫৪ সে. মি. চওড়া পিভিসি / জিআই পাইপ লাইন প্লান্টের সরবরাহ লাইনে চুলা, হ্যাজাক লাইট, জেনারেটর পর্যন্ত সংযোগ।12

সঠিক পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত পরিদর্শন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।11 উৎপাদন এবং ব্যবহারের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্ল্যান্ট নির্মাণ সংস্থার সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।11

"বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের স্থাপনে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন এবং সঠিক নির্মাণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"

সফল বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনে উপযুক্ত স্থান, কাঁচামাল, উত্পাদন প্রক্রিয়া এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ অপরিহার্য।



বায়োগ্যাসের ব্যবহার ও সুবিধা

বায়োগ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ জৈব শক্তির উৎস। এটি বিভিন্ন উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা এই ব্যবহার এবং সুবিধাগুলি বিশ্লেষণ করব।

গৃহস্থালি ব্যবহার

বায়োগ্যাস রান্না, আলো জ্বালানো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।13 এটি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় কম খরচের।

বাণিজ্যিক ব্যবহার

শিল্প কারখানায় বায়োগ্যাস ব্যবহার করা যায়।10 এটি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ কম করে।

পরিবেশগত সুবিধা

বায়োগ্যাস কোনো ধরনের গন্ধ বা ধোঁয়া না দিয়ে ব্যবহৃত হয়।13 এটি একটি পরিচ্ছন্ন জ্বালানি।

এটি অন্যান্য জ্বালানির তুলনায় বায়ুমণ্ডলে কম দূষক নির্গত করে।10 এছাড়াও, এর মজুদ সময় পর্যন্ত শোষণ করা অনুমোদিত।

সংক্ষেপে, বায়োগ্যাস একটি উদ্ভাবিত উত্স। এটি গৃহস্থালি ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। এটি পরিবেশকে রক্ষা করতে সহায়তা করে।

বায়োগ্যাস উৎপাদনে চ্যালেঞ্জ

বায়োগ্যাস উৎপাদনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ আছে। এগুলোর মধ্যে প্রাথমিক বিনিয়োগের উচ্চ ব্যয় এবং প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব অন্যতম। পর্যাপ্ত কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং উৎপাদিত গ্যাসের মান নিয়ন্ত্রণও চ্যালেঞ্জ।14

গ্রামীণ এলাকায় প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাব এবং সরকারি নীতিমালার অপর্যাপ্ততা বাধা। শহরাঞ্চলে ব্যবহৃত বায়োমিথেনেশন প্রযুক্তি গ্রামাঞ্চলে খুব সহজলভ্য নয়।14

বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপাদনে বায়োগ্যাসের ব্যবহার একটি সম্ভাব্য উপায়। কিন্তু টেকসই উৎপাদন ব্যবস্থাপনার দিকে দৃষ্টি না দেওয়া এবং পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।14

সারাংশ করে বলা যায়, বায়োগ্যাস উৎপাদনে টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়।14

বায়োগ্যাস উৎপাদন চ্যালেঞ্জ বর্ণনা
প্রাথমিক বিনিয়োগের উচ্চ ব্যয় বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন ও পরিচালনা খরচ বেশি
প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব বায়োগ্যাস প্রযুক্তির সম্পর্কে আধুনিক ধারণার অভাব
কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত কাঁচামাল সহজলভ্য নয়
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ বায়োগ্যাস প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কঠিন
গ্যাসের মান নিয়ন্ত্রণ উৎপাদিত বায়োগ্যাসের মান নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন
সচেতনতার অভাব গ্রামাঞ্চলে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাব
নীতিমালার অপর্যাপ্ততা বায়োগ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্পষ্ট নীতিমালার অভাব

উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হলে বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়াকে আরও টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে।14 এর জন্য দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ একান্তভাবে প্রয়োজন।14

"বায়োগ্যাস উৎপাদন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।"

বাংলাদেশে বায়োগ্যাসের সম্ভাবনা

বাংলাদেশে বায়োগ্যাস ব্যবহার করা খুব সম্ভাব্য। দেশে পরিমাণগতভাবে কৃষি অবশিষ্ট এবং পশুজ্ঞান রয়েছে। এগুলো বায়োগ্যাস তৈরি করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।15

২৮তম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা হয়েছে। এটি থেকে ৪৮বিসিএফ গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। এখনও, দেশে ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আছে। এগুলোর মোট মজুদ ২৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।15

বাংলাদেশে বায়োগ্যাস উৎপাদন এবং ব্যবহার আরও বেশি করা যেতে পারে।16 ১ কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস থেকে ৫৫০০-৬৫০০ কিলোক্যালরি তাপশক্তি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR) ১৯৭৬ সালে একটি ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছিল।16

কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে।17 জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বা জ্বালানি চাহিদা মেটানো এখন কঠিন। এই ক্ষেত্রে বায়োগ্যাস উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়িয়ে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে সহায়তা করতে পারে।

FAQ

বায়োগ্যাস কী?

বায়োগ্যাস হল জৈব পদার্থ থেকে তৈরি একটি জ্বালানি গ্যাস। এটি পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে তৈরি হয়। জীবাণুর পচনের ফলে এটি বাতাসের অনুপস্থিতিতে উৎপন্ন হয়।

বায়োগ্যাস কীভাবে এবং কেন তৈরি করা হয়?

বায়োগ্যাস তৈরি হয় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে জৈব পদার্থের পচনের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়াকে এনারবিক ডাইজেশন বলে। এটি জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করতে, পরিবেশ সুরক্ষা করতে এবং জৈব সার উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

বায়োগ্যাসের প্রধান উপাদান কী?

বায়োগ্যাসের প্রধান উপাদান হলো মিথেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড এবং জলীয় বাষ্প।

বায়োগ্যাসের বৈশিষ্ট্য কী?

বায়োগ্যাস একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং ধোঁয়াবিহীন জ্বালানি।

বায়োগ্যাস থেকে কত তাপশক্তি পাওয়া যায়?

১ কিউবিক মিটার বায়োগ্যাস থেকে ৫৫০০-৬৫০০ কিলোক্যালরি তাপশক্তি পাওয়া যায়।

বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রক্রিয়া কী?

বায়োগ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়া তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে, বায়োমাসের বিভিন্ন উপাদান ভেঙে সরল উপাদানে পরিণত হয়। দ্বিতীয় ধাপে, এসিড উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এই সরল উপাদানগুলোকে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, হাইড্রোজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে পরিণত করে। শেষ ধাপে, মিথেন উৎপাদনকারী ব্যাকটেরিয়া এই উপাদানগুলোকে মিথেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডে রূপান্তরিত করে।

বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য কী কী কাঁচামাল ব্যবহার করা যায়?

বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করা যায়। যেমন পশুর গোবর, মানুষের মল, কৃষি অবশিষ্ট, রান্নাঘরের আবর্জনা, কচুরিপানা, শিল্প কারখানার বর্জ্য পদার্থ এবং যে কোনো পচনশীল জৈব পদার্থ।

বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের কী কী প্রকার আছে?

বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের দুটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে: স্থির ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট এবং ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। স্থির ডোম প্ল্যান্টে গ্যাস সংগ্রহ ক্ষেত্র স্থির থাকে, যা নির্মাণ খরচ কম করে কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ জটিল। অন্যদিকে, ভাসমান ডোম প্ল্যান্টে গ্যাস সংগ্রহ ক্ষেত্র ওঠানামা করে, যা নির্মাণ খরচ বেশি হলেও পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য কী কী করতে হয়?

বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রথমে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হয়। এরপর ডাইজেস্টার নির্মাণ, ইনলেট ও আউটলেট পাইপ স্থাপন, গ্যাস সংগ্রহ ও সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হয়। প্ল্যান্টের আকার নির্ভর করে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের পরিমাণ ও গ্যাসের চাহিদার উপর।

বায়োগ্যাসের ব্যবহার কী কী?

বায়োগ্যাস গৃহস্থালি কাজে রান্না, আলো জ্বালানো এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বাণিজ্যিকভাবে এটি শিল্প কারখানায় তাপ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। পরিবেশগত সুবিধার মধ্যে রয়েছে বনজ সম্পদ রক্ষা, বায়ু দূষণ হ্রাস, জৈব সার উৎপাদন এবং আবর্জনা ব্যবস্থাপনা।

বায়োগ্যাস উৎপাদনে কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হল: প্রাথমিক বিনিয়োগের উচ্চ ব্যয়, প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব, পর্যাপ্ত কাঁচামালের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, এবং উৎপাদিত গ্যাসের মান নিয়ন্ত্রণ। এছাড়াও, গ্রামীণ এলাকায় প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাব এবং সরকারি নীতিমালার অপর্যাপ্ততা অন্যতম বাধা।

বাংলাদেশে বায়োগ্যাসের সম্ভাবনা কী?

বাংলাদেশে বায়োগ্যাসের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে প্রচুর পরিমাণে কৃষি অবশিষ্ট, পশুর গোবর এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ উপলব্ধ রয়েছে, যা বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

সূত্র লিংকগুলি

  1. জৈবগ্যাস - https://bn.wikipedia.org/wiki/জৈবগ্যাস
  2. নিষ্ক্রিয় গ্যাস - https://bn.wikipedia.org/wiki/নিষ্ক্রিয়_গ্যাস
  3. পাঠ পরিকল্পনা তাপগতিবিদ্যা: সাধারণ গ্যাস সমীকরণ | পাঠ পরিকল্পনা | Teachy পদ্ধতি - https://www.teachy.app/bn/lesson-plan/কলেজ স্তর/একাদশ শ্রেণি/পদার্থবিজ্ঞান/bn-01d7d6
  4. No title found - https://dhukuriaberaup.sirajganj.gov.bd/bn/site/page/mUT0-বায়োগ্যাস-এর-প্রয়োজনীয়-তথ্য
  5. বায়োগ্যাস কি, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি: টেকসই শক্তির আধুনিক সমাধান | Samreen Info ✅ - https://www.samreeninfo.com/2024/09/biogas Solution.html
  6. জ্বালানি: বাংলাদেশে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পরও কেন গ্যাসের সংকট? - BBC News বাংলা - https://www.bbc.com/bengali/articles/crgl5pxn777o
  7. ATEC Bio স্মার্ট এবং আধুনিক কৃষিব্যবস্থা - https://www.atecbio.com/bangladesh/home-copy
  8. প্রবাস থেকে ফিরে বায়োগ্যাস তৈরি করে এলাকায় বিক্রি করছেন বিল্লাল মিয়া | দৈনিক আমার বাংলাদেশ - https://www.amarbangladesh.org/8113/
  9. জৈবগ্যাস - বাংলাপিডিয়া - https://bn.banglapedia.org/index.php?title=জৈবগ্যাস
  10. প্রাকৃতিক গ্যাসের ভালো-মন্দ কী? - https://bn.econologie.com/প্রাকৃতিক-গ্যাসের-সুবিধা-এবং-অসুবিধা/
  11. PDF - http://natpdls.portal.gov.bd/sites/default/files/files/natpdls.portal.gov.bd/notices/ff59765c_01a5_451d_8c19_fd3a3a2cd3e6/Implement Guideline.Biogas.DLS,01Apr,19 (1).pdf
  12. ডেইরী খামারীরা তৈরি করুন বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট - https://ajkerkrishi.com/বায়োগ্যাস-প্ল্যান্ট/
  13. প্রাকৃতিক গ্যাস কি? এখানে আপনার যা জানা দরকার - জ্ঞান - QIXING GROUP - https://yua.cnqixinggroup.com/info/what-is-natural-gas-here-s-what-you-need-to-k-83490894.html
  14. বর্জ্য থেকে জৈব সার, বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন - https://www.shomoyeralo.com/details.php?id=76156
  15. বাংলাদেশে গ্যাস কূপ খননে বিদেশি কোম্পানির দরকার হয় কেন - BBC News বাংলা - https://www.bbc.com/bengali/news-58171609
  16. বায়োগ্যাস ও সম্ভবনা - nirbasitosomoi's bangla blog - https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/nirbasitosomoi/29476666
  17. ‘গ্যাসের দামবৃদ্ধি আমাদের জন্য আশীর্বাদ’ যা বললেন ৩ বিশেষজ্ঞ - https://bangla.thedailystar.net/environment/natural-resources/electricity-fuel/news-424696


Post a Comment

Previous Post Next Post

Comments